ফিলাটেলিক ব্যুরোর সেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা
শফিক রহমান, প্রোবনিউজ: ডাক বিভাগের ফিলাটেলিক ব্যুরোতে ডাকটিকেট সংগ্রহকারিদের ফিলাটেলি এ্যাকাউন্ট রয়েছে, এ্যাকাউন্টে টাকাও আছে, তারপরও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশী-বিদেশী গ্রাহকরা। তাদের অভিযোগ, দায়িত্বে অবহেলা করছে ফিলাটেলিক ব্যুরো। আর ব্যুরোপ্রধান বলছেন, ‘আমি নতুন এসেছি’।
ডাক বিভাগের সব ধরনের ডাক টিকেট এবং উদ্বোধনী খাম পেতে যে কেউ ফিলাটেলিক ব্যুরোতে গ্রাহক হতে পারেন। সে হিসেবে এই ব্যুরোতে বর্তমানে মোট দেশীয় গ্রাহক ৪৫ জন এবং বিদেশী গ্রাহক ৪০ জন। যাদের প্রত্যেকের এ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা রয়েছে। দেশী গ্রাহকদের তালিকায় সর্ব শেষে যিনি রয়েছেন তিনি ঢাকার গ্রীণ রোডের বাসিন্দা খান আশিকুর রহমান। তার নিবন্ধনের তারিখ ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই। এছাড়া দেশী গ্রাহকদের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন চুয়াডাঙ্গার তপর কুমার দাস। তিনি নবায়ন করেছেন ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি।
বিদেশী গ্রাহকদের তালিকার সর্ব শেষে রয়েছেন বেলজিয়ামের Vitaliy Medynic । তিনি ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি ফিলাটেলিক ব্যুরোতে নিবন্ধিত হয়েছেন। এছাড়া বিদেশীদের তালিকার প্রথম ব্যক্তি হলেন কানাডার John Shinpoon । তিনি নিবন্ধিত হয়েছেন ১০১১ সালের ১০ অক্টোবর।
নিয়ম অনুযায়ী ডাকটিকেট এবং উদ্বোধনী খাম প্রকাশের পরপরই তা নিবন্ধিত এসব গ্রাহকদের কাছে স্ব-উদ্যোগে পাঠিয়ে দেবে ডাক বিভাগের ফিলাটেলিক ব্যুরো। সেক্ষেত্রে ডাক টিকেট এবং উদ্বোধনী খামের দাম এবং ডাক মাসুলসহ খরচ প্রতি গ্রাহকের এ্যাকাউন্ট থেকে কেটে রাখবে ব্যুরো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে ডাক বিভাগের ফিলাটেলিক ব্যুরোর এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রাহকরা।
সেবা বঞ্চিত গ্রাহকদের মধ্যে একজন হলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক মহাপরিচালক সৈয়দ আশরাফ আলী। তিনি একদিকে ইসলামি চিন্তাবিদ, লেখক এবং গবেষক। তিনি দেশের প্রবীণ সংগ্রাহক। তার সংগ্রহের ভান্ডারে রয়েছে বিভিন্ন দেশের ডাকটিকেট, উদ্বোধনী খামসহ নানা দেশের বিভিন্ন সময়ের রকমারি দিয়াশলাইয়ের বাক্স। প্রোবনিউজকে তিনি বলেন, নিবন্ধিত গ্রাহক হওয়া স্বত্বেও বিগত কয়েক বছর ধরে ডাক টিকেটসহ উদ্বোধনী খাম পাঠাচ্ছে না ফিলাটেলিক ব্যুরো। হয়তো এ্যাকাউন্টে টাকা নেই। তাই পাঠাচ্ছে না।
কিন্তু ফিলাটেলিক ব্যুরোর লেজার বুক ঘেটে দেখা যাচ্ছে, ২০১২ সালের ৩ জানুয়ারি এ্যাকাউন্ট নবায়ন করেছেন সৈয়দ আশরাফ আলী এবং তাঁর এ্যাকাউন্টে এখনও জমা রয়েছে ১২৭১ টাকা। এ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা থাকা স্বত্বেও বিগত তিন বছরে একবারও তাঁকে কেন ডাক টিকেট এবং উদ্বোধনী খাম পাঠানো হয়নি। জানতে চাইলে ফিলাটেলিক ব্যুরোর ম্যানেজার রেহানা ফেরদৌসী বলেন, “মাত্র দুই মাস হলো আমি এ পদের দায়িত্বে এসেছি। এতদিন কেন পাঠানো হয়নি তার কারণ আমার জানা নেই। তবে এ পদে দায়িত্ব নেয়ার সময়ে গ্রাহকদের কাছে পাঠানোর নিয়ম এবং পাঠাতে হবে কিনা জানতে চাওয়া হলে আমাকে বলা হয়েছে ‘গ্রাহকরা যোগাযোগ করলে পাঠানো যাবে’। সেক্ষেত্রে সৈয়দ আশরাফ আলী যোগাযোগ করলে তাঁকেও পাঠানো হবে”।
একই সঙ্গে জনবল ঘাটতির অভিযোগ তোলেন রেহানা ফেরদৌসী। তবে শুধু জনবল ঘাটতিই নয় ধারণাগত এবং কাঠামোগত দুর্বলতাকেও দায়ী করছেন অপর এক সংগ্রাহক সাজিদ রহমান। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব দরবারে দেশকে পরিচিত করতে এবং ব্রান্ডিং করতে অন্যতম একটি মাধ্যম ডাকটিকেট। সেই জন্যে ডাক টিকেটের ডিজাইন কোয়ালিটি, প্রিন্টিং কোয়ালিটি এবং মেটেরিয়ালস কোয়ালিটি উন্নত হওয়া বাঞ্চনীয়। কারণ, এর সঙ্গেই দেশের প্রেসটিজ ইস্যু জড়িত। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সেদিকে নজর আছে বলে মনে হয় না। ডাকটিকেট এবং উদ্বোধনী খামের ডিজাইন কোয়ালিটিতে ক্যারিশমাটিক কিছু দেখছি না। প্রিন্টিং কোয়ালিটি এবং মেটেরিয়ালস কোয়ালিটি এতটাই নিম্নমানের যে ৫০ বছর পরে এর অবস্থা কি হিবে তা আল্লাই জানেন’।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিনিয়ত উদ্বোধনী খাম ছাপার সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে। দেশের মোট জনসংখ্য ১৬ কোটি। সে হিসেবে প্রতিটি উদ্বোধনী খাম অন্তত ১৬ হাজার করে ছাপানো উচিত। কিন্তু সেখানে ছাপা হচ্ছে মাত্র দুই থেকে আড়াই হাজার। যা দিয়ে দেশী-বিদেশী গ্রাহকদের চাহিদা কোন ভাবেই মিটছে বলে মনে হচ্ছে না।’
উল্লেখ্য, সৈয়দ আশরাফ আলীর শৈশব-কৈশোর থেকে শুরু করে ছাত্রজীবনের পুরোটাই কেটেছে কলকাতা শহরে। ওই সময় থেকেই রয়েছে তার সংগ্রহের অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে কলকাতায় বসে নিয়মিত তিনি পেতেন ভূটানের ডাক টিকেট এবং উদ্বোধনী খাম। এরপরে তিনি ছিলেন পাকিস্তান ডাক বিভাগের নিবন্ধিত গ্রাহক। করাচী পোস্ট অফিস থেকে নিয়মিত পেতেন ডাকটিকেট এবং উদ্বোধনী খাম। এরপরে তিনি হন ঢাকা জিপিও’র নিবন্ধিত গ্রাহক। জানা যায়, ডাক বিভাগের ফিলাটেলিক ব্যুরোতে ফিলাটেলিক এ্যাকাউন্ট সার্ভিস চালু করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন সৈয়দ আশরাফ আলী।
প্রোব/পি/জাতীয়/১১.১০.২০১৫